পৃথিবীর অজানা রহস্য!

পৃথিবী কাঁপানো বহু রহস্যের উদঘাটন হয়নি আজও। তবে এগুলো নিয়ে আলোচনা-গবেষণা চলছে এখনো। রহস্যময় পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বা অ-প্রাকৃতিক রহস্যের সীমা নেই। এরমধ্যে আবার কিছু স্থান বা বিষয় রয়েছে যা অতি-প্রাকৃতিক। এ কারণে এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে হাজারো রহস্যে ঘেরা। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতাও এ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

রহস্যঘেরা এই ভয়ঙ্কর স্থানগুলোকে অতি-প্রাকৃতিক স্থান বলে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।  পৃথিবীতে এমন ২৫টি ভয়ঙ্কর স্থান রয়েছে যেগুলোর রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে হবে কিনা সেটাও বলতে পারছেন না কেউ। অনেকেই স্থানগুলোর নাম শুনেই চমকে উঠেন। তাহলে চলনু, এক নজরে দেখে নিই পৃথিবীর সেই রহস্যময় কয়টি স্থান।

 

১. ম্যাকেঞ্জি ভূত: এডিনবরোর ব্ল্যাক মসোলিয়াম হল স্যার জর্জ ম্যাকেঞ্জির সমাধি। এখানে যে সব পর্যটকরা ঢোকেন, তাদের অনেকেরই গায়ে পড়ে অদ্ভুত আঁচড়। এই আঁচড়ের রহস্য ভেদ করা যায়নি।

 

২. আইয়ুদের অ্যালুমিনিয়াম গোঁজ: ১৯৭৪ সালে রোমানিয়ায় আবিষ্কৃত হয় ২৫ লক্ষ বছর আগের একটি গোঁজ। গোঁজটিতে অ্যালুমিনিয়ামের চিহ্ন পাওয়া যায়। কিন্তু সেসময় অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার ছিল অজানা। সেসময় কোথায় থেকে এ গোঁজ আনা হয়েছে সেটি আজো উদঘাটন হয়নি।

 

৩. এসএস ঔরাঙ্গমেডাং অন্তর্ধান রহস্য: ১৯৪৭ সালে মালয়েশিয়ার এই জাহাজ আকস্মিক ভাবেই সমুদ্রপথে হারিয়ে যায়। সেই জাহাজ কোথায় হারিয়ে গেল জানা যায় না আজও। এমনকি কখনো এ জাহাজের সন্ধান পাওয়া যাবে কিনা সেটিও বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।

 

৪. নাজকা লিপি: প্রাচীন নাজকা সভ্যতার মানুষজন মাটির বিরাট অংশ জুড়ে এঁকে গেছেন মাকড়সা, হনুমান, হাঙর আর ফুলের ছবি। যেগুলোর প্রকৃত আকৃতি একমাত্র বিমান থেকে দেখলেই বোঝা যায়। সেসময় কীভাবে তারা এসব ছবি একেছিলেন সে রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি।

 

৫. লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুরহস্য: ১৯৬৬ সালে তাসখন্দে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু এক রহস্যময় বিষয়। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি আজো রসহস্যময়।

 

৬. ডিবি কুপার: একটি বোয়িং ৭২৭ বিমান হাইজ্যাক করার পর মাঝআকাশে দুই লাখ ডলার সমেত প্যারাশুট নিয়ে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেন কুপার। তার পর কী হল, কোথায় গেলেন তিনি, সে রহস্য আজো অজানা। ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর পোর্টল্যান্ড এবং সিয়াটলের মধ্য আকাশে এ ঘটনা ঘটেছিল। উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের অভিযোগে আজও তাকে খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দারা।

 

৭. ‘ওয়াও’ সঙ্কেত: ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ে আকাশ নিরীক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত জেরি এমান স্যাজিটেরিয়াস তারকাপুঞ্জ থেকে হঠাৎ এক অদ্ভুত বেতার বার্তা পেয়েছিলেন। সেই বার্তার অর্থ আজও অজানা। বিজ্ঞানীরাও এ বার্তার অর্থ উদঘাটন করতে পারেনি।

 

৮. ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সমুদ্রসৈকতের কাটা পা: এই সমুদ্রসৈকতে প্রায়শই ভেসে আসে মানুষের পায়ের কাটা নিম্নাংশ। কাদের পা, কোথা থেকে আসে তা কেউ জানে না। এ নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফলে কাটা পায়ের নিম্নাংশের রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি।

 

৯. ভিনগ্রহের প্রাণী: পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে সত্যি কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে? তারা কি আনাগোনা করে পৃথিবীতে? অনেকে অবশ্য দাবি করেন, পৃথিবীতেই দেখা পেয়েছেন সেসব ভিনগ্রহের প্রাণীর। কিন্তু বস্তুত আজো সেটি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে এ বিষয়ে রহস্য থেকেই যায়।

 

১০. অ্যাটলান্টিসের হারানো শহর: প্লেটোর ‘টিম্যাউস’ এবং ‘ক্রিটিয়াস’ বইতে উল্লেখ রয়েছে অ্যাটলান্টিস বলে এক শহরের। সেই শহর আজ কোথায় গেল? তা কি সমুদ্রের তলায় হারিয়ে গেল সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধানও চালিয়েছেন গবেষকরা কিন্তু রহস্য উদঘাটন হয়নি আজো।

 

১১. তুরিনের শবাচ্ছাদন: এই শবাচ্ছাদনে আঁকা রয়েছে কার মুখ? যিশু খ্রিষ্টের কি? এর খ্রিষ্টান ভক্তরা ও গবেষকরা এই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাননি।

 

১২. স্টোনহেঞ্জ: ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে দু’ মাইল এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রথিত একগুচ্ছ প্রস্তরখণ্ড। কে, কারা বা কেন এই পাথরগুলো সেখানে এনেছিল, কীভাবে এনেছিল, তা সবই রহস্য।

 

১৩. ব্ল্যাক দাহিলা হত্যা: এলিজাবেথ শর্ট ওরফে ব্ল্যাক দাহিলা ১৯৪৭-এ যখন নিহত হন, তখন তাঁর বয়স বাইশ। কে ছিল হত্যাকারী? আজও অজানা।

 

১৪. বিগ ফুট: আমেরিকা ও কানাডার পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা মেলে এক গোরিলা সদৃশ জীব। যাকে স্থানীয়রা বিগ ফুট নামে ডাকেন।

 

১৫. লচ নেস দৈত্য: স্কটল্যান্ডে লচ নেস অঞ্চলের সমুদ্রে এক ডায়নোসর প্রতিম দৈত্যের দেখা পেয়েছেন বলে দাবি করেন অনেকেই। যদিও সত্যিই এমন কোনও দৈত্যের অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা জানা যায় না।

 

১৬. রঙ্গোরঙ্গো: রহস্যমণ্ডিত ইস্টার দ্বীপপুঞ্জে কয়েকটি হায়রোগ্লিফিক লিপি খোদিত কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে। সেই লিপির পাঠোদ্ধার আজও করতে পারেনি কেউ।

 

১৭. জর্জিয়া গাইড স্টোন: ১৯৭৯ সালে আমেরিকার আলবার্ট কউন্টিতে স্থাপিত এই বিরাট প্রস্তরখণ্ডগুলোর গায়ে ইংরেজি, সিংহলি, হিন্দি, হিব্রু, আরবি, চাইনিজ, রাশিয়ান এবং স্প্যানিশ ভাষায় লেখা হয়েছে দশটি নিউ কমান্ডমেন্টস। কিন্তু সেগুলোর অর্থদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি।

 

১৮. জোডিয়াক চিঠি: ১৯৬০-এর দশকে সানফ্রান্সিসকো শহরে এক অপরাধীর আবির্ভাব ঘটে। যার নাম পুলিশের খাতায় ছিল ‘জোডিয়াক কিলার’। পুলিশকে সাতটি মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া চিঠি পাঠায় তিনি। যার তিনটি অর্থ আজও রহস্যমণ্ডিত।

 

১৯. তামাম শুদ: ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের সমুদ্রসৈকতে পাওয়া যায় এক ব্যক্তির মৃতদেহ। তার পকেটে ছিল এক টুকরো কাগজ। যাতে লেখা ছিল তামাম শুদ। যার অর্থ শেষ। কিন্তু কে ছিল সেই ব্যক্তি? আজও অজানা।

 

২০. শেফার্ড মনুমেন্টের গায়ে খোদিত লিপি: ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডশায়ারে অষ্টাদশ শতকে নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভের একজায়গায় খোদাই করে লেখা রয়েছে ‘DOUOSVAVVM’ এর অর্থ জানা আজও সম্ভব হয়নি।

 

২১. ক্রিপ্টোজ: ভার্জিনিয়ায় গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর সদর দপ্তরে রাখা রয়েছে এই সাংকেতিক লিপি। জিম স্যানবর্ন-এর তৈরি করা এই লিপির চতুর্থ অংশটির অর্থ আজও অজানা।

 

২২. বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল: মায়ামি, বারমুডা এবং পুয়ের্তো রিকোর মধ্যবর্তী এই সমুদ্র-অঞ্চলে হারিয়ে গেছে বহু জাহাজ। এমনকী পাইলটরাও অনেকে দাবি করেছেন, এই অঞ্চল দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় কোনও এক অঞ্জাত কারণে অকেজো হয়ে গিয়েছিল তাদের প্লেনের যন্ত্রপাতি।

 

২৩. জ্যাক দ্য রিপার: অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ডে কোনও এক রহস্যময় আততায়ী ১১জন মহিলাকে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে খুন করে। সেই আততায়ী যে আসলে কে ছিল, তা আজও অজানা।

 

২৪. ভয়নিখ পুঁথি: যে রহস্যময় ভাষায় এই পুঁথি রচিত তার মর্মদ্ধার আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেননি। শুধু অর্থ পাওয়া গেছে এই পুঁথির পাতায় পাতায় আঁকা ছবিগুলোর।

 

২৫. তাওয়ের গুঞ্জন: নিউ মেক্সিকোর ছোট্ট শহর তাওয়ে দিগন্তের দিক থেকে ভেসে আসে ডিজেল ইঞ্জিন চলার মতো এক অস্পষ্ট গুঞ্জন। এই আওয়াজ কীসের, তা বিজ্ঞানও জানতে পারেনি।

Leave a comment